মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০১৩

গণতন্ত যেভাবে মানুষকে রব বানিয়ে দেয়:


গণতন্ত যেভাবে মানুষকে রব বানিয়ে দেয়---গণতন্ত্র অবশ্যই একটি ভ্রান্ত পথ, যা একটি কুফর ও
 শিরকী ব্যবস্থা

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

গণতন্ত যেভাবে মানুষকে রব বানিয়ে দেয়---গণতন্ত্র অবশ্যই একটি ভ্রান্ত পথ, যা একটি কুফর ও শিরকী ব্যবস্থা


গণতন্তযার মূল ইংরেজী শব্দ হলো ‘Democracy’এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার হয় ১৫৭৬ সালে।(সূত্র Merriam Webster Dictionary) শব্দটির উদ্ভব হয় গ্রীক শব্দ demokratia থেকেএ ব্যাপারে Wikipedia তথ্য দিচ্ছে যে, “The term comes from the Greek word δημοκρατία (dēmokratía) "rule of the people" which was coined from δῆμος (dēmos) "people" and κράτος (kratos) "power"অর্থাৎ ‘Democracy’ শব্দটি আসে গ্রীক শব্দ δημοκρατία (dēmokratía) থেকে যার অর্থ হলো জনগণের শাসন, অর্থাৎ জনগণের নিজস্ব ইচ্ছা অনুযায়ী শাসন, আরো পরিষ্কার করে বললে, জনগণৃর নিজস্ব ইচ্ছা অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা; তা অর্থ মানুষের (জনগণের) মনগড়া আইন-বিধান ও সংবিধান দ্বারা দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করাএই শব্দটি আবার গ্রীক শব্দ δῆμος (dēmos) যার অর্থ হলো জনগণএবং κράτος (kratos) যার অর্থ হলো ক্ষমতাএই দুইটি শব্দের সমন্বয়ে গঠীতএক কথায় ‘Democracy’ শব্দের শাব্দিক অর্থই হলো জনগণের চূড়ান্ত ক্ষমতা বা জনগণের সার্বভৌমত্ব; পরিষ্কার করে বললে, জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারি।(এই শব্দটিই একটি সর্বোচ্চ শিরকপূর্ণ, অর্থাৎ শিরকে আকবার)এখন আসাযাক ‘Democracy’ এর সংজ্ঞাতে‘Democracy’ ব্যাপারে Dictionary.com সংজ্ঞা দিচ্ছে যে, “a form of government in which the supreme power is vested in the people and exercised directly by them or by their elected agents under a free electoral system”. অর্থাৎ, “গনতণ্ত্র হলো এমন একটি সরকার কঠামো যেখানে জনগণের হাতেই সার্বভৌম ক্ষমতা ন্যাস্ত থাকে এবং এই ক্ষমতা সরাসরি তাদের দ্বারা প্রয়োগ করা হয় (এটাকে বলা হয় প্রত্যক্ষ গনতণ্ত্র, প্রাচীন গ্রীসে এ গনতন্ত্র প্রচলিত ছিল; এখন আর কোথাও এ গনতন্ত্র প্রচলিত নেই) অথবা তাদের দ্বার নির্বাচিত প্রতিনিধির দ্বারা প্রয়োগ করা হয়”(এটাকে বলা হয় পরোক্ষ গনতন্ত্র, পৃথিবীর সর্বোত্র বর্তমানে এই গনতণ্ত্রই প্রচলিত রয়েছে)‘Democracy’ ব্যাপারে Merriam Webster Dictionary সংজ্ঞা দিচ্ছে যে, “a government in which the supreme power is vested in the people and exercised by them directly or indirectly through a system of representation usually involving periodically held free elections” অর্থাৎ, “গনতণ্ত্র হলো এমন একটি সরকার কঠামো যেখানে জনগণের হাতেই সার্বভৌম ক্ষমতা ন্যাস্ত থাকে এবং এই ক্ষমতা সরাসরি তাদের দ্বারা অথবা তাদের দ্বার নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়Wikipedia, Democracy এর ব্যাপারে সংজ্ঞা দিচ্ছে যে, “Democracy is an egalitarian form of government in which all the citizens of a nation together determine public policy, the laws and the actions of their state, “ অর্থাৎ, “ গণতন্ত্র হলো এমন একটি সমতাবাদী বা সমমাত্রিক সরকার কঠামো যেখানে দেশের সমস্ত নাগরিক একত্রে জনগণকে পরিচালনা করার নীতি অর্থাৎ দেশ পরিচালনা করার নীতি নির্ধারনে এবং আইন ও রাষ্টিয় সমস্ত কার্যকলাপ নির্ধারনে সিদ্ধান্ত নেবে (অর্থাৎ জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী দেশের সমস্ত কার্যকলাপ যেমন আইন তৈরী, সংবিধান তৈরী, বিচার-ফয়সালা, অর্থনীতি এককথায় সবকিছুই নির্ধারিত হবেএখানে মূলত জনগণের ইচ্ছাটাই হলো ইলাহ

এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “ তুমি কি লক্ষ করিয়াছ তাহকে, যে তাহর খেয়াল-খুশিকে নিজ ইলাহবানাইয়া লইয়াছে? আল্লাহ জানিয়া শুনিয়াই উহাকে বিভ্রান্ত করিয়াছেন এবং উহর কর্ণ ও হৃদয় মোহর করিয়া দিয়াছেন এবং উহার চক্ষুর উপর রখিয়াছেন আবরনসূরা জাছিয়া-৪৫ঃ২৩
আল্লাহতায়ালা আরো বলেন-এরপর আমি তোমাকে প্রতিস্টিত রেখেছি দ্বীনের( ইসলামী জীবন ব্যবস্তার) বিশেষ বিধানের উপর; সুতরাং তুমি উহার অনুসরন কর, অজ্ঞদের খেয়াল-খুশির অনুসরন করিও নাসুরা জাছিয়া-৪৫ঃ১৮

আবার রাষ্ট বিজ্ঞান পড়ে আমরা আরো জানতে পারলাম যে, রাষ্ট গঠনের জন্য চারটি মৌলিক উপাদান অপরিহার্য; যথা-১) জনসমষ্টি ২) নির্দিষ্ট ভুখন্ড, ৩) সরকার, ৪) সার্বভৌমত্ব;



রাষ্ট বিজ্ঞান আরো বলছে যে, এই চারটি উপাদানের কোন একটি উপাদান অনুপস্থিত থাকলে রাষ্ট গঠন সম্ভব নয়
এখন উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, গনতান্ত্রীক সরকার ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো জনগণের সার্বভৌমত্বএটাই হলো গণতান্ত্রীক সরকার ব্যবস্থার মূল কালেমা, যার উপর ভিত্তি করেই গণতান্ত্রীক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত থাকেএজন্যই জনগণের সার্বভৌমত্বগণতান্ত্রীক সরকার ব্যবস্থার প্রাণ বা আত্মা, যা ছাড়া গণতান্ত্রীক সরকার ব্যবস্থার কোন অস্তিত্ব্যই থাকবে নাএখন এই গণতান্ত্রীক সরকার ব্যবস্থা কিভাবে গঠীত ও পরিচালিত হয় তা বিশ্লেষণ করলে আমরা লক্ষ করবো, প্রথমতঃ জনগণ হলো সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, দ্বীতিয়তঃ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জনগণ তার এই সার্বভৌম ক্ষমতা তাদের মধ্য থেকেই কিছু ব্যক্তির হাতে ন্যাস্ত করে, যাদেরকে বলা হয় এম. পি. । ( সার্বভৌম ক্ষমতা হস্তান্তরের পদ্ধতিটাই হলো নির্বাচন; আর ভোট দেওয়া অর্থ হলো সার্বভৌম ক্ষমতা হস্তান্তর করা।) তৃতীয়তঃ এম.পি. রা জনগণের কাছ থেকে সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করে দেশ পরিচালনা করার ক্ষমতা অর্জন করেআবার রাষ্ট বিজ্ঞান এটাও বলছে যে, “সার্বভৌমত্বের হুকুম বা আদেশই হলো আইন।(একথাটি স্বাভাবিকক্ষেত্রেও প্রযোজ্য; ইসলামে সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক হলো আল্লাহতায়ালা, এজন্য আল্লাহ তয়ালার আদেশই বা নিষেধই হলো চূড়ান্ত আইন ও বিধান।) সেহেতু প্রত্যেক এম.পি. বা Member of Parliament রা হলো আইন-বিধান ও সংবিধান তৈরীকারীআর Parliament (যার শাব্দিক অর্থই হলো আইনসভা -Dictionary খুলে দেখুন) হলো আইন-বিধান ও সংবিধান তৈরী করার স্থানসুতরাং এম.পি. রা জনগণের কাছ থেকে পাওয়া সার্বভৌম ক্ষমতার বলে আইনসভাই বসে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী আইন-বিধান ও সংবিধান তৈরীকরে এবং তা দিয়ে দেশ পরিচালনা করে থাকেএই হলো গণতান্ত্রীক রাষ্ট ব্যাবস্থায় দেশ পরিচালনা করার পদ্ধতি সমূহ



এখন দেখা যাক আমাদের দেশের সংবিধান কি বলে? আপনাদের এটা স্বরণ রাখতে হবে যে, এই সংবিধান হলো কিছু মানুষের ইচ্ছা বা কামনা-বাসনা বা খেয়াল-খুশী এবং এই সংবিধান দ্বারাই দেশের প্রতিটি কাজ পরিচালিত হয়আর যেহেতু বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রীক দেশ ( দেশের সর্বোচ্চ আইন অর্থাৎ সংবিধান কর্তৃক বাংলাদেশকে নামকরণ করা হয়েছে, “ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” ) সুতরাং, স্বাভাবিকভাবে এ দেশেও রাষ্টিয় ব্যবস্থার মূল ভিত্তি জনগণের সার্বভৌমত্ব হওয়ার কথাদেখাযাক আমাদের দেশের সংবিধান কি বলে? বাংলাদেশ সংবিধানের ৭(১) অনুচ্ছেদ বলছে যে, “ প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবেবাংলাদেশ সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদ বলছে যে, “জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরুপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবেআবার বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চম ভাগের শিরোনাম হলো আইন সভাসংবিধানের ৬৫(১) অনুচ্ছেদ বলছে যে, “ ‘জাতীয় সংসদনামে বাংলাদেশের একটি সংসদ থাকিবে এবং সংবিধানের বিধানবলীর-সাপেক্ষে প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়ন ক্ষমতা সংসদের উপর ন্যাস্ত হইবে; বাংলাদেশ সংবিধানের ৮০ (১)(২)(৩) অনুচ্ছেদ বলছে যে, “আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সংসদে আনিত প্রত্যেকটি প্রস্তাব বিল আকারে উথ্থাপিত হইবেসংসদ কর্তৃক কোন বিল গৃহীত হইলে সম্মতির জন্য তাহা রাষ্টপতির নিকট পেশ করিতে হইবেরাষ্টপতির নিকট কোন বিল পেষ করিবার পর পনের দিনের মধ্যে তিনি তাহাতে সম্মতি দান করিবেন



সুতরাং এই সংবিধানের আলোকে এ কথা দিবালোকের মত পরিষ্কার যে, বাংলাদেশ এমন একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক জনগণজনগণ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তার এই সার্বভৌম ক্ষমতা তাদের মধ্য থেকেই কিছু ব্যক্তির হাতে ন্যাস্ত করে, যাদেরকে বলা হয় এম. পি.যারা জনগণের কাছ থেকে এই সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করতে পারে তারাই আইন সভার সদস্য হয়ে আইন তৈরী করার ক্ষমতা লাভ করেএরপর, এম. পি. বা আইন সভার সদস্যরা সংসদ ভবন অর্থাৎ আইন তৈরীর কার্যালয়ে অধিষ্টিত হয়ে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী আইন-বিধান, সংবিধান ইত্যাদি তৈরী করেআবার, যারা জনগণের কাছ থেকে সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করলো তাদের জন্য দায়িত্ব গ্রহনের পূর্বে অর্থাৎ আইন সৃষ্টিকারী হওয়ার পূর্বে এই শপথ করা বাধ্যতামূলক যে, তারা জনগণের ইচ্ছা বা খেয়াল-খুশিকে অর্থাৎ এই সংবিধানের সবকিছুকে সবার উপরে (অর্থাৎ সব আইন ও বিধনের উপরে) স্থান দেবে, রক্ষণাবেক্ষন করবে, সমর্থন করবে ও নিরাপত্তা বিধান করবেএবং যে কোন পরিস্হিতিতে সবার সাথে আইন অনুযায়ী ( অর্থাৎ তাদের পূর্বসূরী মানুষের তৈরী করা আইন অনুযায়ী) যথাবিহিত আচরন করবেশপথ করার বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪৮(১) অনুচ্ছেদ বলছে যে, “ তৃতীয় তফসীলে উল্লেখিত যে কোন পদে নির্বাচিত বা নিযুক্ত বাক্তি কার্যভার গ্রহণের পূর্বে উক্ত তফসীল অনুযায়ী শপথ গ্রহণ বা ঘোষণা করিবেন এবং অনুরপ শপথপত্রে বা ঘোষণপত্রে স্বাক্ষর করিবেনএবং ১৪৮(৩) অনুচ্ছেদ বলছে যে, “এই সংবিধানের অধিন যে ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির পক্ষে কার্যভার গ্রহণের পূর্বে শপথগ্রহণ আবশ্যক, সেই ক্ষেত্রে শপথ গ্রহণের অব্যবহিত পর তিনি কার্যভার গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেআবর বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদের শিরোনামই হলো শপথ ও ঘোষণাএখানে শপথে পঠিত বাক্যগুলো ফরম আকারে তুলে ধরা হয়েছে১৪৮(২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত শপথের ফরমটি এরকম-

আমি…………………………… সশ্রদ্ধচিত্রে শপথ (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করিতেছি যে, আমি আইন অনুযায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী( কিংবা ক্ষেত্রমত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, বা উপমন্ত্রী) পদের কর্তব্য বিশ্বস্তার সহিত পালন করিব;
আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব;
আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান করিব;
এবং আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তি না হইয়া সকলের প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহিত আচরণ করিব


উপরের আলোচন থেকে ইসলামের দৃষ্টিতে একথা সূর্যের আলোর মতই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, যে কেউ গণতন্ত্রকে মেনে নেবে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে গ্রহণ করে নেবে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট অর্থাৎ সার্বভৌম ক্ষমতা হস্তান্তর করবে, এবং যারা জনগণের কাছ থেকে সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করার জন্য (আইন প্রণয়নকারি হিসাবে) প্রার্থি হবে (অর্থাৎ এম. পি. তে দাড়াবে) এবং যারা এম. পি., মন্ত্রী, প্রেসীডেন্ট (এগুলো আবার আইন ও বিধান দাতাদের মধ্যে ক্ষমতার স্তরভেদ) হবে, এরা প্রত্যেকেই কাফির-মুরতাদ তো বটেই বরং এরা সবাই এক একজন রব’ (অর্থাৎ মিথ্যা রব) হয়ে যাবেআর যে কেউ নিজেকে রবের আসনে বসিয়ে নিল বা রব বলে ঘোষণা করলো (অবশ্য এরা মুখ দিয়ে সুস্পষ্টভাবে রব বলে ঘোষণা দেয় না, যার ফলে সাধারণ মানুষ তা বুঝতে পারে না) সে মূলত আল্লাহ হওয়ারই দাবি জানাল।(নাউযুবিল্লাহ)তার প্রমাণ হলো ফিরআউন; ফিরআউন নিজেকে প্রকাশ্য রব বলে দাবি করেছিলো; এজন্যই বলা হয়ে থাকে ফিরআউন নিজেকে আল্লাহ দাবি করেছিলোআর মানুষ যে রবের আসনে বসতে পারে বা মিথ্যা রব হয়ে যেতে পারে তার প্রমাণ পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে দেয়া রয়েছেযেমন পবিত্র কোরআনে আহলে কিতাবিদের ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে যে,

‘‘তারা তাদের সণ্যাসী ও ধর্মযাজক (পীর, আলেম, বা নেতৃস্থানীয় লোকদেরকে) আল্লাহর পরিবর্তে রববানিয়ে নিয়েছে—–’’ (সূরা তওবা ৯: ৩১)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআয়ালা তাঁর নবীকে দাওয়াতী পদ্ধতি শিক্ষা দিতে গিয়েও বলেছেনঃ
‘‘বলো (হে নবী), ‘হে আহলে কিতাবরা! এসো এমন একটি কথার ওপর আমরা একমত হই, যে ব্যাপারে তোমাদের ও আমাদের মাঝে কোন বিরোধ নেইতা হলো আমরা আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কারো গোলামী করবো না, তার সাথে কাউকে শরীক করবো না এবং আমরা একে অপরকে আল্লাহর পরিবর্তে রববানিয়ে নেবো না’’(সূরা আলি-ইমরান ৩: ৬৪)

সরাসরি কোরআনের আয়াত থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, মানষও রব হয় যেতে পারে বা মানুষ মানুষকে রববানিয়ে নেয়যদিও কারো পক্ষে রবহওয়া সম্ভব নয়, তাই এখানে বুঝতে হবে যে অজ্ঞতা, জ্ঞানের স্বল্পতা, একগুয়েমী কিংবা বিভিন্ন কারণে অনেক সময় মানুষ কোনো কোনো মানুষকে এমন স্থানে বসিয়ে দেয়, এমন ক্ষমতা মানুষের হাতে তুলে দেয়; যার কারণে একান্তভাবে আল্লাহর জন্য সংরক্ষিত ক্ষমতার আসনে মানুষকে বসিয়ে রববানিয়ে ফেলেআর এভাবে নিজেদের কর্মকান্ডের দ্বারা তারা নিজেদের জন্য চিরকালীন জাহান্নাম কিনে নেয়অথচ এই লোকগুলোর ভেতরে হয়তো এমন মানুষও আছে যারা নামায পড়ে, রোযা রাখে, হজ্জ করে, যাকাত দেয়, দাড়ি আছে, একান্ত নিষ্ঠার সাথে তাসবীহ জপে, এমনকি তাহাজ্জুদ, এশরাক, আওয়াবীন নামাযও পড়ে

ব্যাপারগুলো আরো স্পষ্ট হওয়ার জন্য চলুন আমরা ফিরআউনের ইতিহাস থেকে ঘুরে আসি, কারণ সে নিজেকে প্রকাশ্য রব দাবি করেছিলো তা কোরআন সুস্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরেছেঃ
‘‘দেশবাসীকে জড় করে সে ভাষণ দিলো, অতপর সে বললো, আমিই তোমাদের সবচেয়ে বড় রব’’ (সূরা নাযিয়াত ৭৯: ২৩-২৪)

এখন কথা হলো, ফেরাউন নিজেকে রববলতে কী বুঝিয়েছে? সে কি দাবী করেছিলো যে, সে আসমান যমীন সৃষ্টি করেছে, মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছে কিংবা পাহাড়-পর্বত যমীনের বুকে গেড়ে যমীনকে সে স্থিতিশীল করে রেখেছে?
না, এমন দাবী সে কখনো করেনিসে যদি এমন দাবী করতো তাহলে তার সংগী-সাথীরাই তাকে পাগল বলে উড়িয়ে দিতোবরং সে নিজেও বিভিন্ন পূজা-পার্বনে অংশ নিতোতারও অনেক ধরনের ইলাহ, মাবুদ বা উপাস্য ছিলোকোরআন থেকেই এর প্রমাণ দেখে নিনঃ

‘‘ফেরাউনের জাতির নেতারা (ফেরাউনকে) বললো, আপনি কি মূসা ও তার দলবলকে রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টির সুযোগ দিবেন আর তারা আপনাকে ও আপনার ইলাহদের এভাবে বর্জন করে চলবে?’’ (সূরা আরাফ ৭: ১২৭)

দেখুন আয়াত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে যে, তারও অনেক ইলাহ বা উপাস্য ছিলোতাহলে তার রবদাবী বলতে আসলে কী বুঝায়? রব বলে সে কী দাবী করেছিলো? আসমান-যমীন, গ্রহ-নক্ষত্র, মানব জাতিসহ কোনো সৃষ্টি জগতের স্রষ্টা বলে কেউ কোনো দিন দাবী তোলেনিমক্কার কাফের মোশরেকরাও এসবের সৃষ্টিকর্তা যে আল্লাহ তাআলা এটা সর্বান্তঃকরণে মানতোযেমনঃ


জিজ্ঞাসা কর, (মক্কার মুশরিকদেরকে)এই পৃথিবী এবং এর মধ্যে যারা আছে তারা কার, যদি তোমরা জান?’ তারা বলবে আল্লাহরবল, ‘তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?’ জিজ্ঞাসা কর,(মক্কার মুশরিকদেরকে) কে সপ্ত আকাশ এবং মহা আরশের অধিপতি?’ তারা বলবে আল্লাহবল, ‘তবুও কি তোমরা ভয় করবে না?’ জিজ্ঞাসা কর,(মক্কার মুশরিকদেরকে) সকল কিছুর কর্তৃত্ব কার হাতে, যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যার উপরে আশ্রয়দাতা নেই, যদি তোমরা জান?’ তারা বলবে আল্লাহরবল, ‘তবুও তোমরা কেমন করে মোহগ্রস্থ হয়ে আছ?’’’ (সূরা মুমিনুন ২৩ঃ ৮৪-৮৯)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেছেনঃ

‘‘(হে রাসূল) তুমি জিজ্ঞাসা করঃ (হে মুশরিকগণ) যিনি আসমান ও যমীন থেকে তোমাদেরকে রুযীর সংস্থান করে দেন কে সেই (পাক পরওয়ারদেগার), কে তিনি যিনি শ্রবণ ও দর্শনের প্রকৃত অধিকারী ? এবং কে সেই (মহান স্রষ্টা) যিনি জীবন্তকে মৃত হতে আবির্ভূত করেন, আর কেই বা সেই মহান সত্তা যিনি মৃতকে জীবন্ত থেকে বহির্গত করেন? এবং কে সেই (রব পরওয়ারদেগার) যিনি কুদ্রতের সকল ব্যাপারকে সুনিয়ন্ত্রিত করেন? তাহারা নিশ্চয় তৎক্ষণাৎ জওয়াব দিবেঃ আল্লাহ! তুমি বলঃ এই স্বীকারোক্তির পরেও তোমরা সংযত হয়ে চলনা কেন?’’ (সূরা ইউনুস ১০ঃ ৩১)




এমন আরো অসংখ্য আয়াত আছে যা প্রমাণ করে যে, তারা সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা, লালনকর্তা, পালনকর্তা ও রিযিকদাতা হিসাবে আল্লাহকে মানতো, সুতরাং সমস্যাটা কোথায় ? এই বিশ্বাস থাকার পরও কেন তারা কাফের-মোশরেক, কেন তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত ? ফেরাউন তাহলে কী দাবী করেছিলো ? এই প্রশ্নগুলো শুনে হয়তো অনেকে বিভ্রান্তিতে পড়ে যাবেনকিমত্মু বিভ্রান্ত হওয়ার কিংবা অন্ধকারে হাতড়ে মরার কোনো প্রয়োজনই নেইসরাসরি আল্লাহর কালাম কোরআনই আমাদেরকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছে যে, ফেরাউনের দাবী ছিল সার্বভৌমত্বের দাবীসারা পৃথিবীতে নয় তার দাবী ছিল কেবল মিশরের শাসন ক্ষমতার উপর নিরংকুশ আধিপত্যের দাবীতার দাবী ছিলো মিশরের সাধারণ জনগণের জন্যে তার ইচ্ছানুযায়ী যেমন খুশী তেমন আইন-কানুন ও মূল্যবোধ নির্ধারনের ক্ষমতার দাবী
দেখুন কোরআন কী বলেছেঃ

‘‘ফেরাউন তার জাতির উদ্দেশ্যে (এক) ভাষণ দিলোসে বললো, মিশরের সার্বভৌমত্ব কি আমার নয়? তোমরা কি দেখছো না যে, এই নদীগুলো আমার (রাজত্বের ) অধীনেই বয়ে চলছে——–’’ (সূরা যুখরুফ ৪৩:৫১)
এসব বলে সে তার জাতিকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুললো, এক পর্যায়ে তারা তার আনুগত্য মেনেও নিলোএটি প্রমাণ করে যে, নিঃসন্দেহে তারা নিজেরাও ছিলো এক পাপীষ্ঠ জাতি’’ (সূরা যুখরুফ ৪৩:৫৪)



কোরআনের আয়াতগুলো এবং বাস্তব প্রেক্ষাপট যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, চক্র বা যে কারো সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়া মানেই হলো তাকে বা তাদেরকে রববানিয়ে নেয়াকারণ অন্য কারো সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়া মানেই হলো আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করে আইন-কানুন রচনা করার অধিকারসহ নিরংকুশ শাসন কর্তৃত্ব তাদের হাতে তুলে দেয়া

তারা কিভাবে তাদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে রববানিয়ে নিয়েছিলো তা আমরা সরাসরি আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর করা এই আয়াতের তাফসীরের আলোকে একেবারে স্পষ্ট করে বুঝতে পারবো ইনশাআল্লাহতিরমিযীতে উদ্ধৃত হাদিসে হযরত আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে এসে দেখলাম তিনি সূরা তওবার এই আয়াতটি তেলাওয়াত করছিলেনঃ

‘‘তারা তাদের সন্ন্যাসী ও ধর্মযাজক (পীর, নেতৃস্থানীয় লোকদেরকে) আল্লাহর পরিবর্তে রববানিয়ে নিয়েছে——’’ (সূরা তওবা ৯:৩১)

অতপর রাসূল (সাঃ) বলেন তোমরা শোনো তারা তাদেরকে (শাব্দিক অর্থে) পূজা/ উপাসনা করতো না, কিমত্মু তারা যখন মনগড়া ভাবে কোনো কিছুকে বৈধ ঘোষনা করতো, জনগণ তা মেনে নিতো, আর যখন কোনো কিছুকে অবৈধ ঘোষণা করতো তখন তারা তা অবৈধ বলে মেনে নিতো



তাফসীরে ইবনে কাসীরে ইমাম আহমদ তিরমিযী ও ইবনে জারীরের সূত্রে আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তার কাছে ইসলামের দাওয়াত আসার পরে প্রথমে তিনি সিরিয়ায় পালিয়ে গিয়েছিলেন, পরে যখন রাসূল (সাঃ) এর কাছে তিনি এলেন তখন তার গলায় ক্রুশ ঝুলানো ছিলোতখন রাসূল (সাঃ) উল্লেখিত আয়াতটি পড়ছিলেনহযরত আদী (রাঃ) বলেন, আহলে কিতাবরা (ইহুদী ও খৃষ্টানরা) তো আলেম/ দরবেশদের (তথা নেতাদের)পূজা উপাসনা করতো না ! রাসূল (সাঃ) বললেন, তা সত্যতবে তারা মনমতো কোনো কিছুকে বৈধ কিংবা অবৈধ ঘোষনা করলে জনগণ তা নির্বিচারে মেনে নিতোএটাই তাদের পূজা-উপাসনা/ ইবাদত




বর্তমান তাগুতী (সীমালঙ্ঘনকারী) সরকার ব্যবস্থায় এর উদাহরণ দেখুন, ১.যিনা ২ব্যাভীচার ৩মদ, ৪. জুয়া, ৫. লটারী, ৬. সুদ, ৭. বেপর্দা, ৮.নারী নেতৃত্ব, ৯. বেশ্যাবৃত্তি (ব্যভিচার) ১০গান-বাজনা ও নাটক-সিনেমা ১১নগ্নতা এমন আরো অসংখ্য বিষয় রয়েছে, যেগুলো আল্লাহ তাআলা কঠোর ভাবে অবৈধ ঘোষণা করেছেন, পক্ষান্তরে, তারা এগুলোকে বৈধতার সার্টিফিকেট দিয়েছে, তারা এগুলোকে সম্পূর্ণ বৈধ এবং হালাল বলে ঘোষনা দিয়েছে।( বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩৭৬ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, “যদি কোন ব্যক্তি ১৬ বছর বয়সের নীচে কোন মহিলার সঙ্গে তার বিনা অনুমতিতে যৌন কর্মে লিপ্ত হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তি ধর্ষনের অভিযোগে অভিযুক্ত হইবেতার অর্থ হলো ধর্ষনের জন্য অভিযুক্ত করতে হলে দুটি শর্ত পূরন করতে হবে ১মহিলার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা তার বিনা অনুমতিতে তার সঙ্গে যৌনকর্ম করা হয়েছে ২এবং উক্ত মহিলার বয়স ১৬ বসরের নীচেযদি মহিলার বয়স ১৬ বসরের বেশী হয় এবং সে যদি নিজের ইচ্ছায় দৈহিক মিলনে লিপ্ত হয় অথবা এতে যদি তার কোন আপত্তি না থাকে তাহলে তা ধর্ষন বলে গণ্য করা হবে নাতার অর্থ বাংলাদেশের আইনে এটা কোন পাপ বা অপরাধই হবে না এবং যিনা ও ব্যভিচার সম্পূর্ণ বৈধ ও ১০০% হালালএছাড়া বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি কোন লোক অপর একজন বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে উক্ত মহিলার স্বামির অনুমতি বা সহযোগিতা ছাড়া যৌনকর্মে লিপ্ত হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তি ব্যভিচারের অপরাধে অপরাধি হবে এবং সাজাপ্রাপ্ত হবেএখানে দেখা যাচ্ছে যে, ব্যভিচার তখনই গণ্য হবে যখন উক্ত বিবাহিতা মহিলার স্বামীর বিনা অনুমতিতে অথবা তার স্বামীর বিনা সহযোগিতায় যৌনকর্ম করা হয়েছেযদি স্বামীর অনুমতি বা সহযোগিতায় তার সঙ্গে অপর পুরুষ যোনকর্ম করে তাহলে বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৪৯৭ নং ধারামতে উহা ব্যভিচার নয় এবং তার জন্য উক্ত পুরুষকে সাজা দেওয়া চলে নাএছাড়া বাংলাদেশের আইনে আরো উল্লেখ রয়েছে য, “কোন মহিলা যদি তার বয়স ১৬ বসরের বেশী হয় তাহলে তিনি একজন প্রথম শ্রেণীর মেজিষ্ট্র্যাটের নিকট হাজির হয়ে হলফনামার মাধ্যমে নিজেকে শবেশ্যা হিসাবে ঘোষনা দিয়ে নির্ধারিত পতিতালয়ে গিয়ে দেহ ব্যবসা করতে পারবে-তাতে যদি কেউ বাধা সৃস্টি করে তাহলে উক্ত বাধাদানকারি আইনের চোখে অপরাধী বলে গণ্য হবেবাংলাদেশ দন্ডবিধির ৮৫ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, “যদি কোন ব্যক্তি মদ পানের দরুন বোধ শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং সে অবস্থায় কোন অপরাধ করে তাহলে তার জন্য আইনের চোখে তিনি দন্ডনীয় হবেন নানাউযুবিল্লাহ নাউযুবিল্লাহ নাউযুবিল্লাহ।)

দন্ডবিধির বিষয়টি দেখুন হত্যা, অপহরন, চুরি ও ডাকাতির দন্ড, ধর্ষনের দন্ড, সন্ত্রাস দমন আইন, বিবাহ বিধিসহ আরো অনেক বিষয়ে আল্লাহ তাআলা যে বিধান আল-কোরআনের মাধ্যমে ঘোষনা করেছেন, তা বাদ দিয়ে তারা নিজেদের মনমতো দন্ড বিধি তৈরী করছেএই অধিকার তারা পেলো কোথা থেকে? কে দিলো তাদেরকে এই অধিকার?

প্রীয় মুসলিম ভাই এবং বোনেরা, আমি নিজেই নিজেকে এবং আপনাদেরকে আল্লাহকে ভয় করার উপদেশ দেবআপনারা আল্লাহকে ভয় করুনআল্লাহকে ভয় করুনআল্লাহকে ভয় করুনজেদের বশবর্তি হবেন না, খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেন না, কিংবা কোন নেতা-নেত্রী, কোন পন্ডিত ব্যাক্তি বা জনপ্রীয় ব্যাক্তিদের অন্ধ অনুসরণ করবেন নাআল্লাহকে ভয় করুনকেননা এ ব্যাপারে কেয়ামতের দিন কোনো ওজর ওজুহাত চলবে না, জানতাম না বলেও পার পাওয়া যাবে না

কেননা, আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে কোরআনে বলে দিয়েছেনঃ

‘‘(হে মানবজাতি) স্মরণ করো সেই সময়ের কথা, যখন তোমাদের রবআদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের পরবর্তী বংশধরদের বের করে এনেছেন এবং তাদেরকেই তাদের নিজেদের ব্যাপারে সাক্ষ্য রেখে বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের একমাত্র রবনই? তারা সবাই বললো, ‘হ্যাঁ, আমরা সাক্ষ্য দিলাম (যে আপনিই আমাদের একমাত্র রব’)’, এই সাক্ষ্য আমি এ জন্যই নিলাম যে, হয়তো কেয়ামতের দিন তোমরা বলে বসবে যে, আমরা আসলে বিষয়টি জানতামই না
অথবা তোমরা হয়তো বলে বসবে যে, আমরা তো দেখেছি আমাদের বাপ-দাদারা আগে থেকেই এই শের্কী কর্মকান্ড করে আসছে (সুতরাং আমরা তো অপরাধী না, কারণ) আমরা তো তাদের পরর্বতী বংশধর মাত্রতারপরও কি তুমি পূর্ববর্তী বাতিলপন্থীদের কর্মকান্ডের কারণে আমাদেরকে ধ্বংস করে দেবে?’’ (সূরা আরাফ ৭:১৭২-১৭৩)

আল্লাহ (সুব) কোরআনের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, এ ব্যাপারে কোনো অজুহাত চলবে না, জানতাম না বলেও কোন লাভ হবে না

এর কারণ হলো সার্বভৌম ক্ষমতা অর্থাৎ আইন প্রনয়ন, শাসন ও বিচার ফয়সালার সর্বময় চূড়ান্ত ক্ষমতা ও এখতিয়ার যতক্ষণ মানুষের হাত থেকে পরিপূর্ণভাবে ছিনিয়ে এনে আল্লাহর হাতে ন্যস্ত না হবে, ততক্ষণ ইসলামের অস্তিত্ব বলতেই এখানে কিছু নেইকারণ অন্যের সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়া অর্থই হলো আল্লাহকে অস্বীকার করাআর যেখানে আল্লাহকে অস্বীকার করা হয় সেখানে ইসলামের অস্তিত কিভাবে থাকেএটি কাফের মোশরেকদের এমন এক সূক্ষ-ষড়যন্ত্র, যার মাধ্যমে আল্লাহকে কার্যত অস্বীকার করা সত্তেও সাধারণ মানুষ তা বুঝতে পারে নাআপনি লক্ষ্য করলে দেখতে পারেন, তারা বলে না তোমরা ইসলাম ছাড়ো, তারা বলে, তোমরা গণতন্ত্র গ্রহণ কর, জনগনের আইন গ্রহণ কর, তোমরা গণতন্ত্র গ্রহণ কর, কেননা তারা ভালো করেই জানে যে, গণতন্ত্র গ্রহণ অর্থই হলো ইসলামকে বর্জন করাকেননা তারা ভালো করেই জানে যে, গণতন্ত্র গ্রহণ অর্থই হলো ইসলামকে বর্জন করা

মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বহাল থাকলেই অর্থাৎ আল্লাহকে একমাত্র নিরংকুশ আইনদাতা মানলেই ইসলামের অস্তিত্ব অক্ষুন্ন থাকেআল্লাহর সার্বভৌমত্ব বজায় না থাকলে সেখানে ইসলামের অস্তিত এক মুহুর্তও থাকতে পারে নাবলার অপেক্ষা রাখেনা যে, আজকের পৃথিবীতে ইসলামের একমাত্র সমস্যা এই যে, আল্লাহর যমীনে আল্লাহদ্রোহী তাগুতী শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও প্রভুত্বের ওপর ভাগ বসাচ্ছে, তা ছিনতাই করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে আর নামাযী, দাড়ী-টুপিওয়ালা, তাসবীহ ওয়ালা লোকরা তাদেরকে সমর্থন ও সব রকম সাহায্য সহযোগীতা দেয়া থেকে শুরু করে সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদ গ্রহণ করে তাদের সহায়তা করে বৈষয়িক ফায়দা লুটছে

এই শাসক শ্রেনী তাদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা নিশ্চিত করছে এবং স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, অর্থনীতি, সমাজ, পরিবার তথা সাধারণ মানুষের জীবন, সহায় সম্পদ ও তাদের মধ্যে বিবাদমান বিষয়ে নিজেদের খেয়ালখুশী মতো বিধি নিষেধ প্রয়োগ করছেঅথচ এটাই সেই সমস্যা যার মোকাবেলা করার জন্য কোরআন নাযিল হয়েছে এবং সে আইন প্রনোয়ণ ও বিধি নিষেধ প্রনোয়ণ ও প্রয়োগের ক্ষমতাকে দাসত্ব ও প্রভুত্বের সাথে সম্পৃক্ত করেছে এবং স্পষ্ট ভাষায় ঘোষনা করেছে যে, এর আলোকেই সিদ্ধান্ত আসবে কে মুসলিম-কে অমুসলিম, কে মুমিন ও কে কাফির

ইসলাম তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রথম যে লড়াই চালিয়েছে, তা নাস্তিকতার বিরুদ্ধে পরিচালিত লড়াই ছিলনাএ লড়াই সামাজিক ও নৈতিক উচ্ছৃংখলতার বিরুদ্ধেও ছিল নাকেননা এসব হচ্ছে ইসলামের অস্তিত্বের লড়াইয়ের পরবর্তী লড়াইবস্তুত ইসলাম নিজের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বপ্রথম যে লড়াই করেছে, তা ছিল সার্বভৌমত্বের অধিকারী কে হবে সেটা স্থীর করার লড়াইএজন্য ইসলাম মক্কায় থাকা অবস্থাতে এ লড়াইয়ের সূচনা করেছিলসেখানে সে কেবল আক্বিদা বিশ্বাসের পর্যায়ে এ কাজ করেছিল, রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা বা আইন প্রণয়নের চেষ্টা করেনিতখন কেবল মানুষের মনে এই বিশ্বাস বদ্ধ মূল করার চেষ্টা করেছে যে, সার্বভৌমত্ব তথা প্রভুত্ব ও সর্বময় ক্ষমতা এবং আইন বা হুকুম জারির ক্ষমতা ও শর্তহীন আনুগত্য লাভের অধিকার একমাত্র আল্লাহরকোন মুসলমান এই সার্বভৌমত্বের দাবী করতে পারে না এবং অন্য কেউ দাবী করলে জীবন গেলেও সেই দাবী মেনে নেবে নাকোন মুসলমান এই সার্বভৌমত্বের দাবী করতে পারে না এবং অন্য কেউ দাবী করলে জীবন গেলেও সেই দাবী মেনে নেবে নামক্কায় অবস্থান কালে মুসলমানদের মনে যখন এই আক্বিদা দৃঢ়ভাবে বদ্ধমূল হলো, তখন আল্লাহ তাআয়ালা তাদেরকে তা বাস্তবে প্রয়োগের সুযোগ দিলেন মদিনায়
সুতরাং আজকালকার ইসলামের একনিষ্ঠ ও আবেগোদ্দীপ্ত ভক্তরা ভেবে দেখুন, তারা ইসলামের প্রকৃত মর্ম উপলব্ধি করেছেন কি না?

যারা একমাএ আল্লাহর গোলামী করে এবং মানুষকে রব’-এর আসনে বসায় না তারাই মুসলমানযারা একমাএ আল্লাহর গোলামী করে এবং মানুষকে রব’-এর আসনে বসায় না তারাই মুসলমানএকমাত্র এই বৈশিষ্ট্যই তাদেরকে দুনিয়ার সকল জাতি ও গোষ্ঠির উর্ধে স্বতন্ত্র মর্যাদা দান করে এবং দুনিয়ার সকল জাতির জীবন যাপন পদ্ধতির মধ্য থেকে তাদের জীবন পদ্ধতির স্বকীয়তার নির্দেশ করেউপরোক্ত বৈশিষ্ট্য তাদের মধ্যে থাকলে তারা মুসলমান, নচেত তারা অমুসলিম, চাই তারা যতই নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করুক না কেনউপরোক্ত বৈশিষ্ট্য তাদের মধ্যে থাকলে তারা মুসলমান, নচেত তারা অমুসলিম, চাই তারা যতই নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করুক না কেন

মানবরচিত সকল জীবন ব্যবস্থায় মানুষ মানুষকেই আল্লাহর আসনে বসায়কোন দেশে সর্বোচ্চমানের গণতন্ত্র কিংবা সর্বনিম্নমানের স্বৈরাতন্ত্র- যা-ই থাকুক সর্বত্র এই একই অবস্থাপ্রভূত্বের সর্বপ্রথম বৈশিষ্ট্য হলো মানুষকে গোলাম বানানোর অধিকার এবং মানুষের জন্য আইন-কানুন, মূলবোধ ও মানদন্ড রচনার অধিকারপরিমার্জিত বা পরিশোধিত বা অঘোষিতভাবে হোক, মানবরচিত সকল ব্যবস্থায় একটি মানবগোষ্ঠী কোন না কোন আকারে এই অধিকারের দাবীদারএতে করে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর লোকেরা অবৈধভাবে সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে পড়েএই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীটি বাদ বাকী দেশবাসীর দন্ডমূন্ডের কর্তা হয়ে তাদের জন্য আইন কানুন,রীতি নীতি, মূল্যবোধ ও মানদন্ড নির্ধারণ করেকোরআনের আয়াতে একেই বলা হয়েছে মানুষকে মানুষের রববানিয়ে নেয়াএভাবেই বর্তমান বিশ্বের সকল দেশের সাধারণ জনগণ তাদের শাসক শ্রেণীর ইবাদত, অনুগত্য ও গোলামী করে তাদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছে; যদিও তারা তাদের উদ্দেশ্যে রুকু-সিজদা করেনাঅথবা গণতন্ত্রকে গ্রহণ করে তারা নিজেরাই রব হয়ে গিয়েছে

এই অর্থেই ইসলাম আল্লাহর দেয়া একমাত্র জীবন ব্যবস্থাদুনিয়ার সকল নবী ও রাসূল এই ইসলাম নিয়েই এসেছিলেনআল্লাহ তাআয়ালা মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে তার নিজের দাসত্বের অধীন করার জন্য এবং মানুষকে যুলুম থেকে মুক্ত করে আল্লাহর ন্যায়-বিচারের ছায়াতলে আশ্রয় দানের জন্যই নবীদেরকে যুগে যুগে ইসলামী বিধান সহকারে পাঠিয়েছেনযারা তা অগ্রাহ্য করে, তারা মুসলমান নয়, তা সে যতই সাফাই গেয়ে নিজেকে মুসলমান প্রমাণ করার চেষ্টা করুক না কেন- যারা তা অগ্রাহ্য করে, তারা মুসলমান নয়, তা সে যতই সাফাই গেয়ে নিজেকে মুসলমান প্রমাণ করার চেষ্টা করুক না কেন এবং তাদের নাম আব্দুর রহমান, আব্দুর রহিম যাই হোক না কেন

সুতরাং হে মুসলিম! যারা গণতন্ত্রকে মেনে নিলো অর্থাৎ সার্বভোম ক্ষমতার মালিক জনগণএকথা স্বীকার করে নিলো এবং গণতান্ত্রীক প্রক্রীয়ায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে তা নিজের উপর প্রয়োগ করলো, এবং যারা সার্বভৌম ক্ষমতা হস্তান্তর প্রকিয়ায় অর্থাৎ ভোট প্রদানে অংশগ্রহণ করলো, যারা আইন-বিধান প্রণয়নকারী হিসাবে সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করার জন্য পদপ্রার্থী হলো এবং যারা জনগণের কাছ থেকে সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করলো, অতঃপর কিছু কুফ্ফার-মুরতাদদের ইচ্ছা-আকাঙ্খা, খেয়াল-খুশীকে অর্থাৎ সংবিধানকে সবার উপরে, সব আইন ও বিধানের ঊর্ধে তুলে ধরার জন্য, রক্ষণবেক্ষন, সমর্থন, ও নিরাপত্তাবিধান করার জন্য দৃঢ়ভাবে শপথ করলো তাদের সবারই কাফের, মুরতাদ, ত্বাগুত ও মিথ্যা রব হওয়ার ব্যাপারে আমার হৃদয়ে কোন সংশয় ও দ্বীধা নেই


গণতন্তের ব্যাপারে জগতবিখ্যাত কিছু আলেমদের কথা তুলে ধরা হলো

বর্তমান সময়ে বিশ্বের হকপন্থী আলেমদের মধ্যে একজন শ্রেষ্ট আলেম শায়ক আবু মুহাম্মদ আল মাকদিসি(হাফিযাহুল্লাহ) গণতন্ত্রকে একটি আলাদা দ্বীন বা জীবন ব্যাবস্থা বা ধর্ম হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন